গোরভাঙা রিসোর্স সেন্টারে একাধিক বাউল কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এই কর্মশালাগুলিতে বাউল গায়করা প্রখ্যাত বাউল গুরুদের থেকে তালিম প্রাপ্ত হন। এই প্রথা বাউলদের সনাতন ঐতিহ্যবাহী আখড়া-ভিত্তিক প্রথার অন্তর্গত। বাউল ফকিরি দর্শন-উপলব্ধির বুনিয়াদ পোক্ত করা এবং গানের অন্তর্নিহত অর্থ সম্যক উপলব্ধি করা – এই-ই হল এই কর্মশালাগুলির উদ্দেশ্য। বাউল-ফকিরি প্রথার বিভিন্ন আঙ্গিক – যেমন, প্রভাতের ধ্যান, বাদ্যযন্ত্র বিষয়ে জ্ঞানচর্চা, গানবাজনা চর্চা, দর্শন আলোচনা – এই সব মিলিয়েই আয়োজিত হয় এক একটি কর্মশালা।
২০২১ সালের ৩০শে জানুয়ারী বাউল এবং ফকিরদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। হিপামস প্রকল্পের প্রভাব, শিল্পীদের অভিজ্ঞতার আদানপ্রদান এবং ভবিষ্যত কর্মপন্থার পরিকল্পনা করাই ছিল এই কর্মশালার উদ্দেশ্য। কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন ৯জন মহিলা-সহ প্রায় ৪৭জন শিল্পী। আলোচনা হয় দক্ষতা কে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরের পদ্ধতি নিয়ে এবং তাঁরা মন্তব্য করেন যে গুরুর কাছে আত্মসমর্পণই ঐতিহ্য কে জানার একমাত্র উপায়।বাউলানীদের (মহিলা বাউল শিল্পী) যাত্রাপথের সংগ্রামের কাহিনী শুনে বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীরা তাঁদের প্রশংসা করেন ও জানান যে বর্তমান প্রজন্মের যাত্রাপথ অপেক্ষাকৃত সহজ। শিল্পীরা সবাই আর্টকোডগুলির প্রশংশা করেন এবং সেগুলি ব্যবহার করতে সম্মত হন। বর্তমানে বাজার চলতি বাউলগানের বিকৃতি নিয়েও আলোচনা হয় এই কর্মশালায়। বর্তমান প্রজন্মের কলেজ যাওয়া ছেলেমেয়েরা যারা বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পীদের সোশাল মিডিয়া ব্যবহারে সাহায্য করেছে তারাও উপস্থিত ছিল এবং তারাও এই কর্মশালাটির ভূয়সী প্রশংসা করে।
বাউল-ফকিরদের গ্রাম গোরভাঙায় যাঁরা গিয়েছেন, অভিভূত হয়েছেন। তাঁদের মতে, বাউল ফকিরদের গান তাঁদের উপনীত করেছিল চেতনা ও উপলব্ধিময় এক অপার শান্তির দুনিয়ায়। শহরের কোলাহলমুখর জগৎ দেখে দূরে, প্রকৃতির কোলে এই শান্ত-সুন্দর গ্রাম তাঁদের অভিভূত করেছিল।
বননবগ্রাম বাউল আশ্রাম, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি জেলায় বসবাসকারী বিভিন্ন ঘরানার বাউল-ফকিররা পালা করে আসেন, সাত থেকে দশ দিন থাকেন এবং নির্ধারিত সময়ে সংগীত পরিবেশন করেন। গ্রামবাসীদের জন্য কোনও প্রবেশমূল্য নেই। আতিথি এবং গ্রামবাসীরা এই অনুষ্ঠান খুবই উপভোগ করেন।